ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় টিআইবি পুরস্কার পেলেন ১০ গণমাধ্যমকর্মী

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ গণমাধ্যম কর্মীসহ অতিথিরা। মাইডাস ভবন, ঢাকা,৯ ডিসেম্বর।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পুরস্কার পেলেন ১০ গণমাধ্যমকর্মী।

নিউজ ডেস্ক ::

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারের মেঘমালা কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৯’ দেওয়া হয়।

পুরস্কার পাওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় ক্যাটাগরিতে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফখরুল ইসলাম, প্রিন্ট মিডিয়া (স্থানীয়) ক্যাটাগরিতে যশোরের গ্রামের কাগজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি দেওয়ান মোর্শেদ আলম, প্রধান প্রতিবেদক এম আইউব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফয়সল ইসলাম ও মোতাহার হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম আরিফ, উজ্জ্বল বিশ্বাস, মিনা বিশ্বাস এবং স্বপ্না দেবনাথ, ইলেকট্রনিক মিডিয়া (টিভি রিপোর্ট) ক্যাটাগরিতে চ্যানেল ২৪–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইকবাল আহসান, ইলেকট্রনিক মিডিয়া (টিভি ডকুমেন্টারি) ক্যাটাগরিতে মাছরাঙা টেলিভিশনের অনুসন্ধান দল।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন টিআইবির ন্যায়পাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব সাংবাদিকতাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। সংবাদ তো অনুসন্ধান করেই বের করতে হয়। তাহলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেন বিশেষায়িত? এর পেছনেও সংবাদ কাটতি বাড়ানোর বিষয় আছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিশেষায়িত হয়েছে প্রতিকূল অবস্থার কারণে। যদি সবকিছু অনুকূল থাকত, অর্থাৎ সরকার আদর্শিক অবস্থানে মালিকেরা, পাঠকেরা আদর্শিক অবস্থানে, তাহলে তো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হতো না।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাড়ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তিটা নৈতিক, যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন আসে, মানবাধিকার, নীতির প্রশ্ন আসে। এগুলো থেকে যখন পুরো দেশ বিচ্যুত হয়ে যায়, যখন দুর্নীতি, সহিংসতা বাড়ে, তখনই অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়। যারা দুর্নীতি করছে বা অপরাধ করছে, তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে সরকার বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান, তখনই অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়। এটি যে সহজ কিছু, তা কিন্তু না।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যম সাম্প্রতিক কালে অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দুটি ধারা আছে। একটি অংশ এই অবস্থায় নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে। যোগসাজশে, সুবিধা অর্জনের সুযোগ ও পেশাগত আপস করছে। দ্বিতীয় অংশটি এর মধ্যেই টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘টিকে থাকতে গিয়ে হয়তো আরও আপস করতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, টিকে থাকতে হবে, টিকে থেকে কাজ করতে হবে, টিকে থাকতে গিয়ে মূল জায়গায় আপস করা যাবে না। সম্ভাবনা এখনো আছে, এই সম্ভাবনা আরও বিকশিত করার কথা বলতে হবে।’

আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, একাত্তর টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান প্রমুখ।

২০১৯ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলী ছিলেন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম গবেষক আফসান চৌধুরী, নিউইয়র্ক টাইমসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলফিকার আলী মানিক ও প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক কুর্‌রাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা।

অনুষ্ঠানে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ প্রেক্ষিত গণমাধ্যম জবরদখল’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন টিআইবির পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটি পর্যায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের যে যূথবদ্ধ রূপ দেখা গেছে, গণমাধ্যম জবরদখলের জন্য তা আদর্শ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত।

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই যেভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। আরও বিব্রতকর ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সহায়ক শক্তি’ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার ঘটনা। দেশের ৩২ সাংবাদিক ও সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, গণমাধ্যমগুলোয় একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং তারা স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন বা সম্পাদকীয় লিখতে সাহস পাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: